Search This Blog

Wednesday, 13 March 2019

দেবী

বিশ্বজিৎ সরকার


আমার দেবী এগারো হাত
তোমার দেবী কত ?
আমার দেবী লাখের ওপর
তোমার টা কি অত ?

আমার দেবী থিমের দেবী
মূর্তি গড়া কাঁচে,
তোমার দেবী ওই তো দেখি
সেই পুরোনো ধাঁচে ।

আমার দেবীর গয়না জানো ?
সোনায় রূপায় মিশে,
তোমার দেবীর বসন ভূষণ
করেছো ভাই কিসে ?

আমার দেবী তোমার দেবী
দেবী কারোর কিনা,
দেবী হাসেন অন্তরালে
দেবী পক্ষহীনা ।

Tuesday, 12 March 2019


চিঠি

বিশ্বজিৎ সরকার


নীলু,
কেমন আছিস? অনেক দিন তোকে দেখিনা,
আজ আবার লিখছি চিঠি, অনেক দিন তো লিখিনা।
বৌমা ভালো আছে? আর আমার দাদুভাই?
জানিস খুব ইচ্ছে করে, তোদের একটু কাছে পাই।
সেই সেবার এসেছিলি, নিলি আমার হাতের ছাপ,
তারপর তো আর এলিনা, জানি ভীষণ কাজের চাপ।
রাতে ভালো ঘুম হয়না, তোদের কথা মনে পড়ে,
এমনিতে খুব ভালই আছি, বুকটা খালি কেমন করে।
কয়েকদিন তোর বাবা আসে, হাতছানি দেয় আমায় ডাকে,
এমনি ভাবে রাত কেটে যায়, চাঁদ ডুবে যায় গাছের ফাঁকে।
কখনও বা এইটুকু তুই, দৌড়ে এসে জাপটে ধরিস,
সময় যদি পাস কখনো, চিঠিখানা একটু পড়িস।
অফিসে তুই কি খেয়ে যাস? সকাল সকাল ভাত হয়?
টিফিনে রোজ কি নিয়ে যাস? ফিরতে তো সেই রাত হয়।
পিঠে খেতে ভালোবাসতিস, আমার হাতের সর্ষে ইলিশ,
কখনও খেতে ইচ্ছে হলে, রাঁধব আবার আমায় বলিস।
তোর তো খোকা বুকের অসুখ, কে করে দেয় গরম জল?
শুনেছি নাকি ফ্ল্যাট বাড়িতে, ঠান্ডা গরম দুখানা নল।
অনেক বড় মানুষ হ তুই, দিনে দিনে বাড়ুক মান,
আমার নীলু দেশের দশের, শুনেই আমার জুরায় কান।
লিখতে আর পারছি না রে, হাত তা এখন কাঁপছে খুব,
রাত্রি বোধহয় কেটেই গেল, ফর্সা হলো দূরের পুব।
ছুটি পেলে পারলে আসিস, সামনেই তো পুজোর মাস,
ইতি,
আমি মা রে তোর
ঠিকানা: সেই বৃদ্ধাবাস।

Monday, 4 March 2019

মায়ের কোলে আমি

বিশ্বজিৎ সরকার


রাতটা বোধহয় পূর্ণিমার, আকাশে মস্ত চাঁদ,
আমি তখন ঘুরে দেখছি, পুরোনো বাড়ির ছাদ।
এমনিতেই আজকাল আর, তেমন আসা হয়না
সেই যেবার হারিয়েছিল মায়ের পোষা ময়না,
এসেছিলাম সেবার।
ইচ্ছে ছিল মা-বাবাকে, সঙ্গে করে নেবার।
মা বলল – 
“কি করে যাই বল?
সামনে আসছে ঝড় বাদল।
এদিকে তোর বাবার জ্বর,
তোরা কি আর আমার পর ?
কাল সকালে চলে যাস।
যাবার আগে তোর বাবাকে, একবারটি বলে যাস।
এখন কানে কম শোনে,
তবু তুই এসেছিস, সেটা হয়তো জানে।
মুখে রুচি নেই, একদম কিছু খায় না,
কথায় কথায় এখন তার, হরেক রকম বায়না।
দু বেলা তার গরম জল,
কে করবে বল ?
এবাড়িতে এলাম যখন, বয়স আমার কুড়ি,
হাত ধো, মুখ ধো, খা দুটি মুড়ি।
এই তো আমার ভিটের মাটি
যে মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি,
কি করে এই সোনায় ছাড়ি বল?
এই নে ধর, এটা ওদের বাড়ির কুয়োর জল।”
কাঁপা হাতে তুলে দিলেন, কাঁসার জলের পাত্র,
এরপর খুব অল্প সময়, কিছুক্ষন আর মাত্র।
আবার জন সমুদ্রে ভাসি,
মনে মনে যা ই থাকুক, মুখে তবুও হাসি।
সেবারের পর, প্রথম এলাম এই,
কিন্তু মা কে আর, পেলাম বল কই ?
মায়ে বাবায় একই সাথে গেল
হয়তো কোন নতুন বাস্তু পেল।
শেষ কটি দিন আই সি ইউ তেই ছিল
সেখান থেকেই শ্মশান ঘটে নিলো।
এলাম এবার বেচতে বাড়ি খানা,
দরদাম সব হয়েই গেছে জানা।
নষ্ট হবে শুধুই পরে পরে,
বেচে স্ত্রী কে গয়না দেব গড়ে।
শেষবারটি দেখছি ঘুরে ছাদ,
ঠিক তখনই, পড়লো চোখে চাঁদ।
মনে পড়ে মধুর সুরে, মায়ের করা গান
এখনো কি চাঁদ মামা রোজ, টিপটি  দিয়ে যান ?
কিন্তু,
ওদিক পানে কে দাঁড়িয়ে? পড়েছে কার ছায়া?
নাকি আমি ভুল দেখছি? চাঁদের আলোর মায়া?
টিপে টিপে পা, গেলাম যখন কাছে,
একটি শিশু মায়ের কোলে, চুপটি করে আছে।
মা তাহারে আদর করে, আগলে রাখে খুব যতন,
মুখখানা তার ভীষন চেনা, ঠিক যেন সে আমার মতন।
নারীমূর্তির দৃষ্টি তখন ওদিক পানে,
যেন সে সব ই জানে,
ইচ্ছে করে করছে আমায় ছল।
হাঁক দিলাম, কে? কে তুই? আমায় বল।
চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে, অপূর্ব এক ঘ্রান,
সেই রমণী গাইছে তখন, মায়াবী কোন গান।
“আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা,
চাঁদের কপালে চাঁদ, টিপ দিয়ে যা।”
এ গান আমার খুব ই চেনা, কণ্ঠ তাতে মায়ের,
গন্ধ টাকেও চিনতে পারি, এ তো তার ই গায়ের।
দূরে কে এক, বজায় যেন বাঁশি,
আমি তখন, চোখের জলে ভাসি।
ছুটে গিয়ে ধরতে গেলাম যেই,
সবই ফাঁকা, কেউ কোথাও নেই।
হে ইশ্বর,তোমার কাছে, চাইনা কিছুই দামি,
শুধু আরেকটি বার, দেখতে যেন পাই, 
জ্যোৎস্না রাতে, মায়ের কোলে আমি।